দেবতত্ত্ব ও হিন্দুধর্ম্ম
ইন্দ্র স্তোত্র আদিপর্ব্বের পঞ্চবিংশ অধ্যায় হইতে উদ্ধৃত করিতেছি। “হে সুরপতে! সম্প্রতি তোমা ব্যতিরেকে আমাদিগের প্রমাণ রক্ষার আর কোন উপায়ান্তর নাই-যেহেতু তুমিই প্রচুর বারি বর্ষণ করিতে সমর্থ। তুমি বায়ু ; তুমি মেঘ ; তুমি অগ্নি ; তুমি গগনমণ্ডলে সৌদামিনী রূপে প্রকাশমান হও এবং তোমা হইতেই ঘনাবলী পরিচালিত হইয়া থাকে ; তোমাকেই লোকে মহামেঘ বলিয়া নির্দ্দেশ করে ; তুমি ঘোর ও প্রকাণ্ড বজ্রজ্যোতিঃস্বরূপ ; তুমি আদিত্য ; তুমি বিভাবসু ; তুমি অত্যাশ্চর্য্য মহাভূত ; তুমি নিখিল দেবগণের অধিপতি ; তুমি সহস্রাক্ষ ; তুমি দেব ; তুমি পরমগতি ; তুমি অক্ষয় অমৃত ; তুমি পরম পূজিত সৌম্যমূর্ত্তি ; তুমি মুহূর্ত্ত ; তুমি তিথি ; তুমি বল ; তুমি ক্ষণ ; তুমি শুক্লপক্ষ ; তুমি কৃষ্ণপক্ষ ; তুমিই কলা, কাষ্ঠা, ত্রুটী, মাস, ঋতু, সম্বৎসর ও অহোরাত্র ; তুমি সমস্ত পর্ব্বত ও বনসমাকীর্ণ বসুন্ধরা ; তুমি তিমিরবিরহিত ও সূর্য্যসংস্কৃত আকাশ ; তুমি তিমিতিমিঙ্গিল সহিত উত্তুঙ্গতরঙ্গকুলসঙ্কুল মহার্ণব।” এই স্তোত্রে জগদ্ব্যাপী পরমেশ্বরের বর্ণনা করা হইল।
তার পর আদিপর্ব্বের দুই শত ঊনবিংশ অধ্যায় হইতে অগ্নি স্তোত্র উদ্ধৃত করি।
“হে হুতাশন! মহর্ষিগণ কহেন, তুমিই এই বিশ্ব সৃষ্টি করিয়াছ, তুমি না থাকিলে এই সমস্ত জগৎ ক্ষণকালমধ্যে ধ্বংস হইয়া যায় ; বিপ্রগণ স্ত্রীপুত্র সমভিব্যাহারে তোমাকে নমস্কার করিয়া স্বধর্ম্মবিজিত ইষ্টগতিপ্রাপ্ত হন। হে অগ্নে! সজ্জনগণ তোমাকে আকাশবিলগ্ন সবিদ্যুৎ জলধর বলিয়া থাকেন ; তোমা হইতে অস্ত্র সমুদায় নির্গত হইয়া সমস্ত ভূতগণকে দগ্ধ করে ; হে জাতবেদঃ! এই সমস্ত চরাচর বিশ্ব তুমিই নির্ম্মাণ করিয়াছ ; তুমিই সর্ব্বাগ্রে জলের সৃষ্টি করিয়া তৎপরে তাহা হইতে সমস্ত জগৎ উৎপাদন করিয়াছ ; তোমাতেই হব্য ও কব্য যথাবিধি প্রতিষ্ঠিত থাকে ; হে দেব! তুমি দহন ; তুমি ধাতা ; তুমি বৃহস্পতি ; তুমি অশ্বিনীকুমার ; তুমি মিত্র ; তুমি সোম এবং তুমিই পবন।”
বনপর্ব্বের তৃতীয় অধ্যায়ে সূর্য্য স্তোত্র এইরূপ-“ওঁ সূর্য্য ; অর্য্যমা, ভগ, ত্বষ্টা, পূষা, অর্ক, সবিতা, রবি, গভস্তিমান্, অজ, কাল, মৃত্যু, ধাতব, প্রভাকর, পৃথিবী, জল তেজঃ, আকাশ, বায়ু, সোম, বৃহস্পতি, শুক্র, বুধ, অঙ্গারক, ইন্দ্র, বিবস্বান্, দীপ্তাংশু, শুচি, সৌরি, শনৈশ্চর, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্র, স্কন্দ, বরুণ, যম, বৈদ্যুতাগ্নি, জঠরাগ্নি, ঐন্ধনাগ্নি, তেজঃপতি, ধর্ম্মধ্বজ বেদকর্ত্তা, বেদাঙ্গ, বেদবাহন, সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলি, কলা, কাষ্ঠা, মুহূর্ত্ত, ক্ষপা, যাম, ক্ষণ, সম্বৎসরকর, অশ্বত্থ, কালচক্র, বিভাবসু, ব্যাক্তাব্যক্ত, পুরুষ, শাশ্বতযোগী, কালাধ্যক্ষ, প্রজাধ্যক্ষ, বিশ্বকর্ম্মা, তমোনুদ, সাগর, অংশ, জীমূত, জীবন, অরিহা, ভূতাশ্রয়, ভূতপতি, স্রষ্টা, সম্বর্ত্তক, বহ্নি, সর্ব্বাদি, অলোলুপ, অনন্ত, কপিল, ভানু, কামদ, জয়, বিশাল, বরদ, মন সুপর্ণ, ভূতাদি, শীঘ্রগ, ধন্বন্তরি, ধূমকেতু, আদিদেব, দিতিসূত, দ্বাদশাক্ষর, অরবিন্দাক্ষ, পিতা, মাতা, পিতামহ, স্বর্গদ্বার, প্রজাদ্বার, মোক্ষদ্বার, তৃবিষ্টপ, দেহকর্ত্তা, প্রশান্তাত্মা, বিশ্বাত্মা, বিশ্বতোমুখ, চরচরাত্মা, সূক্ষ্মাত্মা ও মৈত্রেয়, স্বয়ম্ভূ ও অমিততেজা।”
তার পর আদিপর্ব্বে তৃতীয় অধ্যায়ের অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের স্তোত্র উদ্ধৃত করিতেছিঃ-
“হে অশ্বিনীকুমার! তোমরা সৃষ্টির প্রারম্ভে বিদ্যমান ছিলে ; তোমরাই সর্ব্বভূতপ্রধান হিরণ্যগর্ভরূপে উৎপন্ন হইয়াছ, পরে তোমারই সংসারে প্রপঞ্চস্বরূপে প্রকাশমান হইয়াছ। দেশকাল ও অবস্থাদ্বারা তোমাদিগের ইয়ত্তা করা যায় না ; তোমরাই মায়া ও মায়ারূঢ় চৈতন্যরূপে দ্যোতমান আছ ; তোমরা শরীরবৃক্ষে পক্ষিরূপে অবস্থান করিতেছ ; তোমরা সৃষ্টির প্রক্রিয়ার পরমাণু সমষ্টি ও প্রকৃতির সহযোগিতার আবশ্যকতা রাখ না ; তোমরা বাক্য ও মনের অগোচর ; তোমরাই স্বীয়প্রকৃতি বিক্ষেপশক্তি দ্বারা নিখিলবিশ্বকে সুপ্রকাশ করিয়াছ।”
দুই শত একত্রিশ অধ্যায়ে, কার্ত্তিকেয়ের স্তোত্র এইরূপঃ-