চন্দ্রশেখর
শৈবলিনী পূর্বপ্রদত্ত উত্তর পুনরুক্ত করিলেন। নবাব মৌনী হইয়া রহিলেন। অধর দংশন করিয়া, শ্মশ্রু উৎপাটন করিলেন। গুর্গতণ খাঁকে ডাকিতে আদেশ করিলেন। শৈবলিনীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন ইংরেজ বেগমকে ধরিয়া লইয়া গেল, জান?”
শৈ। না।
ন। প্রতাপ তখন কোথায় ছিল?
শৈ। তাঁহাকেও উহারা সেই সঙ্গে ধরিয়া লইয়া গিয়াছে।
ন। তাহার বাসায় আর কোন লোক ছিল?
শৈ। একজন চাকর ছিল, তাঁহাকেও ধরিয়া লইয়া গিয়াছে।
নবাব আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন, তাঁহাদের ধরিয়া লইয়া গিয়াছে, জান?”
শৈবলিনী এতক্ষণ সত্য বলিতেছিল, এখন মিথ্যা আরম্ভ করিল। বলিল, “না ।”
ন। প্রতাপ কে? তাহার বাড়ী কোথায়?
শৈবলিনী প্রতাপের সত্য পরিচয় দিল।
ন। এখানে কি করিতে আসিয়াছিল?
শৈ। সরকারে চাকরি করিবেন বলিয়া।
ন। তোমার কে হয়?
শৈ। আমার স্বামী।
ন। তোমার নাম কি?
শৈ। রূপসী।
অনায়াসে শৈবলিনী এই উত্তর দিল। পাপিষ্ঠা এই কথা বলিবার জন্যই আসিয়াছিল।
নবাব বলিলেন, “আচ্ছা, তুমি এখন গৃহে যাও ।”
শৈবলিনী বলিল, “আমার গৃহ কোথা—কোথা যাইব?”
নবাব নিস্তব্ধ হইলেন। পরক্ষণে বলিলেন, “তবে তুমি কোথায় যাইবে?”
শৈ। আমার স্বামীর কাছে। আমার স্বামীর কাছে পাঠাইয়া দিন। আপনি রাজা, আপনার কাছে নালিশ করিতেছি;—আমার স্বামীকে ইংরেজ ধরিয়া লইয়া গিয়াছে; হয়, আমার স্বামীকে মুক্ত করিয়া দিন, নচেৎ আমাকে তাঁহার কাছে পাঠাইয়া দিন। যদি আপনি অবজ্ঞা করিয়া, ইহার উপায় না করেন, তবে এইখানে আপনার সম্মুখে আমি মরিব। সেই জন্য এখানে আসিয়াছি।
সংবাদ আসিল, গুর্গবণ খাঁ হাজির। নবাব, শৈবলিনীকে বলিলেন, “আচ্ছা, তুমি এইখানে অপেক্ষা কর। আমি আসিতেছি ।”