ধর্ম্মতত্ত্ব
বিলে বতোরুক্রমবিক্রমান্ যে ন শৃন্বতঃ কর্ণপুটে নরস্য।
জিহ্বাসতী দার্দ্দুরিকেব সূত নযোপগায়ত্যুরুগায় গাথাঃ ||
ভারঃ পরং পট্টকিরীটজুষ্টপ্যুত্তমাঙ্গং ন নমেন্মুকুন্দং।
শাবৌ করৌ নো কুরুতঃ সপর্য্যাং হরের্ল্লসৎকাঞ্চনকঙ্কণৌ বা ||
বর্হায়িতে তে নয়নে নরাণাং লিঙ্গানি বিষ্ণের্ননিরীক্ষতে যে।
পাদৌ নৃণাং তৌ দ্রুমজন্মভাজৌ ক্ষেত্রাণি নানুব্রজতো হরের্যৌ ||
জীবঞ্ছবো ভাগবতাঙ্ঘ্রিরেণূন্ না জাতু মর্ত্যেভিলভেত যস্তু।
শ্রীবিষ্ণুপদ্যা মনুজস্তুলস্যাঃ শ্বসঞ্ছবো যস্তু ন বেদ গন্ধং ||
তদশ্মসারং হৃদয়ং বতেদং যদ্গৃহ্যমানৈর্হরিনামধেয়ৈঃ।
ন বিক্রিয়েতাথ যদা বিকারো নেত্রে জলং গাত্ররুহেষু হর্ষঃ ||
ভাগবত, ২ স্ক, ৩ অ, ২০-২৪।
“যে মনুষ্য কর্ণপুটে হরিগুণানুবাদ শ্রবণ না করে, হায়! তাহার কর্ণ দুইটি বৃথা গর্ত্ত মাত্র। হে সূত! যে হরিগাথা গান না করে, তাহার অসতী জিহ্বা ভেকজিহ্বাতুল্যা। যাহার মস্তক মুকুন্দকে নমস্কার না করে, তাহা পট্ট-কিরীট-শোভিত হইলেও বোঝা মাত্র। যাহার হস্তদ্বয় হরির সপর্য্যয় না করে, তাহা কনককঙ্কণে শোভিত হইলেও মড়ার হাত মাত্র। মনুষ্যদিগের চক্ষুর্দ্বয় যদি বিষ্ণুমূর্ত্তি * নিরীক্ষণ না করে, তবে তাহা ময়ূরপুচ্ছ মাত্র। আর যে চরণদ্বয় হরিতীর্থে পর্য্যটন না করে, তাহার বৃক্ষজন্ম লাভ হইয়াছে মাত্র। আর যে ভগবৎপদরেণু ধারণ না করে, সে জীবদ্দশাতেই শব। বিষ্ণুপাদর্পিত তুলসীর গন্ধ যে মনুষ্য না জানিয়াছে, যে নিশ্বাস থাকিতেও শব। হায়! হরিনামকীর্ত্তনে যাহার হৃদয় বিকারপ্রাপ্ত না হয়, এবং বিকারেও যাহার চক্ষে জল ও গাত্রে রোমাঞ্চ না হয়, তাহার হৃদয় লৌহময়।”
এই শ্রেণীর ভক্তেরা এইরূপে ঈশ্বরে বাহ্যেন্দ্রিয় সমর্পণ করিতে চাহেন। কিন্তু ইহা সাকারোপাসনাসাপেক্ষ। নিরাকারে চক্ষুপাণিপাদের এরূপ নিয়োগ অঘটনীয়।
শিষ্য। কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর এখনও পাই নাই। ভক্তির প্রকৃত সাধন কি?
যে তু সর্ব্বাণি কর্ম্মাণি ময়ি সংন্যস্য মৎপরাঃ।
অনন্যনৈব যোগেন মাং ধ্যায়ন্ত উপাসতে ||
তেষামহং সমুদ্ধর্ত্তা মৃত্যুসংসারসাগরাৎ।
ভবামি ন চিরাৎ পার্থ ময্যাবেশিতচেতসাং ||
ময্যেব মন আধৎস্ব ময়ি বুদ্ধিং নিবেশয়।
নিবসিষ্যসি ময্যেব অত ঊর্দ্ধং ন সংশয়ঃ || ১২। ৬-৮
“হে অর্জ্জুন! যাহারা সর্ব্বকর্ম্ম আমাতে ন্যস্ত করিয়া মৎপরায়ণ হয়, এবং অন্য ভজনারহিত যে ভক্তিযোগ, তদ্দ্বারা আমার ধ্যান ও উপাসনা করে, মৃত্যুযুক্ত সংসার হইতে সেই আমাতে নিবিষ্টচেতাদিগের আমি অচিরে উদ্ধারকর্ত্তা হই। আমাতে তুমি মন স্থির কর, আমাতে বুদ্ধি নিবিষ্ট কর, তাহা হইলে তুমি দেহান্তে আমাতেই অধিষ্ঠান করিবে।”
* এখানে “লিঙ্গানি বিষ্ণো:” অর্থে বিষ্ণুর মূর্ত্তিসকল। অতি সঙ্গত অর্থ। তবে শিবলিঙ্গের কেবল সেই অর্থ না করিয়া, কদর্য্য উপন্যাস ও উপাসনাপদ্ধতিতে যাই কেন?