শিষ্য। এখানে অধর্ম্ম মানে hygiene?

গুরু। যাহা শারীরিক নিয়মবিরুদ্ধ, তাহা শারীরিক অধর্ম্ম।

শিষ্য। ধর্ম্মাধর্ম্ম কি স্বাভাবিক নিয়মানুবর্ত্তিতা আর নিয়মাতিক্রম?

গুরু। ধর্ম্মাধর্ম্ম অত সহজে বুঝিবার কথা নহে। তাহা হইলে ধর্ম্মতত্ত্ব বৈজ্ঞানিকের হাতে রাখিলেই চলিত। তবে হিম লাগান সম্বন্ধে অতটুকু বলিলেই চলিতে পারে।

শিষ্য। তাই না হয় হইল। বাচস্পতির দারিদ্র্য দুঃখ কোন্ পাপের ফল?

গুরু। দারিদ্র্য দুঃখটা আগে ভাল করিয়া বুঝা যাউক। দুঃখটা কি?

শিষ্য। খাইতে পায় না।

গুরু। বাচস্পতির সে দুঃখ হয় নাই, ইহা নিশ্চিত। কেন না, বাচস্পতি খাইতে না পাইলে এত দিন মরিয়া যাইত।

শিষ্য। মনে করুন, সপরিবারে বুকড়ি চালের ভাত আর কাঁচকলা ভাতে খায়।

গুরু। তাহা যদি শরীর পোষণ ও রক্ষার পক্ষে যথেষ্ট না হয়, তবে দুঃখ বটে। কিন্তু যদি শরীর রক্ষা ও পুষ্টির পক্ষে উহা যথেষ্ট হয়, তবে তাহার অধিক না হইলে দুঃখ বোধ করা, ধার্ম্মিকের লক্ষণ নহে, পেটুকের লক্ষণ। পেটুক অধার্ম্মিক।

শিষ্য। ছেঁড়া কাপড় পরে।

গুরু। বস্ত্রে লজ্জা নিবারণ হইলেই ধার্ম্মিকের পক্ষে যথেষ্ট। শীতকালে শীত নিবারণও চাই। তাহা মোটা কম্বলেও হয়। তাহা বাচস্পতির জুটে না কি?

শিষ্য। জুটিতে পারে। কিন্তু তাহারা আপনারা জল তুলে, বাসন মাজে, ঘর ঝাঁট দেয়।

গুরু। শারীরিক পরিশ্রম ঈশ্বরের নিয়ম। যে তাহাতে অনিচ্ছুক, সে অধার্ম্মিক। আমি এমন বলিতেছি না যে, ধনে কোন প্রয়োজন নাই। অথবা যে ধনোপার্জ্জনে যত্নবান্, সে অধার্ম্মিক। বরং যে সমাজে থাকিয়া ধনোপার্জ্জনে যথাবিহিত যত্ন না করে, তাহাকে অধার্ম্মিক বলি। আমার বলিবার উদ্দেশ্য এই যে, সচরাচর যাহারা আপনাদিগকে দারিদ্র্যপীড়িত মনে করে, তাহাদিগের নিজের কুশিক্ষা এবং কুবাসনা-অর্থাৎ অধর্ম্মে সংস্কার, তাহাদিগের কষ্টের কারণ। অনুচিত ভোগলালসা অনেকের দুঃখের কারণ।

শিষ্য। পৃথিবীতে কি এমন কেহ নাই, যাহাদের পক্ষে দারি‍দ্র্য যথার্থ দুঃখ?

গুরু। অনেক কোটি কোটি। যাহারা শরীর রক্ষার উপযোগী অন্নবস্ত্র পায় না-আশ্রয় পায় না-তাহারা যথার্থ দরিদ্র। তাহাদের দারিদ্র্য দুঃখ বটে!

শিষ্য। এ দারিদ্র্যও কি তাহাদের ইহজন্মকৃত অধর্ম্মের ভোগ?

গুরু। অবশ্য।

শিষ্য। কোন্ অধর্ম্মের ভোগ দারিদ্র্য?

গুরু। ধনোপার্জ্জনের উপযোগী গ্রাসাচ্ছাদন আশ্রয়াদির প্রয়োজনীয় যাহা, তাহার সংগ্রহের উপযোগী আমাদের কতকগুলি শারীরিক ও মানসিক শক্তি আছে। যাহারা তাহার সম্যক্ অনুশীলন করে নাই বা সম্যক্ পরিচালনা করে না, তাহারাই দরিদ্র।