চন্দ্রশেখর
দলনী মনে মনে বাঙ্গালার অধীশ্বরের শত শত প্রশংসা করিল। বলিল, “প্রাণেশ্বর! আপনি যাহা বলিলেন, তাহাতে আমি কি বলিব? কিন্তু আমার একটি ভিক্ষা আছে। আপনি স্বয়ং যুদ্ধে যাইবেন না |”
মীরকা। এ বিষয়ে কি বাঙ্গালার নবাবের কর্তব্য যে, স্ত্রীলোকের পরামর্শ শুনে? না বালিকার কর্তব্য যে, এ বিষয়ে পরামর্শ দেয়?
দলনী অপ্রতিভ হইল, ক্ষুণ্ণ হইল। বলিল, “আমি না বুঝিয়া বলিয়াছি, অপরাধ মার্জনা করুন। স্ত্রীলোকের মন সহজে বুঝে না বলিয়াই এ সকল কথা বলিয়াছি। কিন্তু আর একটি ভিক্ষা চাই |”
“কি?”
“আপনি আমাকে যুদ্ধে সঙ্গে লইয়া যাইবেন?”
“কেন, তুমি যুদ্ধ করিবে না কি? বল, গর্গণ খাঁকে বরতরফ করিয়া তোমায় বাহাল করি |”
দলনী আবার অপ্রতিভ হইল, কথা কহিতে পারিল না। মীরকাসেম তখন সস্নেহভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন যাইতে চাও?”
“আপনার সঙ্গে থাকিব বলিয়া |” মীরকাসেম অস্বীকৃত হইলেন। কিছুতেই সম্মত হইলেন না।
দলনী তখন ঈষৎ হাসিয়া কহিল, “জাঁহাপনা! আপনি গণিতে জানেন; বলুন দেখি, আমি যুদ্ধের সময় কোথায় থাকিব?”
মীরকাসেম হাসিয়া বলিলেন, “তবে কলমদান দাও |”
দলনীর আজ্ঞাক্রমে পরিচারিকা সুবর্ণনির্মিত কলমদান আনিয়া দিল।
মীরকাসেম হিন্দুদিগের জ্যোতিষ শিক্ষা করিয়াছিলেন। শিক্ষামত অঙ্ক পাতিয়া দেখিলেন। কিছুক্ষণ পরে, কাগজ দূরে নিক্ষেপ করিয়া, বিমর্ষ হইয়া বসিলেন। দলনী জিজ্ঞাসা করিল, “কি দেখিলেন?”
মীরকাসেম বলিলেন, “যাহা দেখিলাম, তাহা অত্যন্ত বিস্ময়কর। তুমি শুনিও না |”
নবাব তখনই বাহিরে আসিয়া মীরমুন্িসীকে ডাকাইয়া আজ্ঞা দিলেন, “মুরশিদাবাদে একজন হিন্দু কর্মচারীকে পরওয়ানা দাও যে, মুরশিদাবাদের অনতিদূরে বেদগ্রাম নামে স্থান আছে—তথায় চন্দ্রশেখর নামে এক বিদ্বান্ ব্রাহ্মণ বাস করে—সে আমাকে গণনা শিখাইয়াছিল—তাহাকে ডাকাইয়া গণাইতে হইবে যে, যদি সম্প্রতি ইংরেজদিগের সহিত যুদ্ধারম্ভ হয়, তবে যুদ্ধকালে এবং যুদ্ধ—পরে, দলনী বেগম কোথায় থাকিবে?”
মীরমুন্ুসী তাহাই করিল। চন্দ্রশেখরকে মুরশিদাবাদে আনিতে লোক পাঠাইল।