শ্রীভগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে
শ্রীকৃষ্ণার্জ্জুনসম্বাদে অর্জ্জুনবিষাদে 13
নাম প্রথমোহধ্যায়ঃ।

বলিয়াছি, গীতার প্রথম অধ্যায়ে ধর্ম্মতত্ত্ব কিছু নাই, কিন্তু এই অধ্যায় একখানি উৎকৃষ্ট কাব্য। কাব্যর উপাদান সকল এখানে বড় সুন্দর সাজান হইয়াছে। কুরুক্ষেত্রে উভয় সেনা সুসজ্জিত হইয়া পরস্পর সম্মুখীন হইয়াছে। পাণ্ডবদিগের মহতী সেনা ব্যূহবদ্ধা হইয়াছে দেখিয়া রাজা দুর্য্যোধন, পরম রণপণ্ডিত আপনার আচার্য্যকে দেখাইলেন। একটু ভীত হইয়া আচার্য্যকে বলিলেন, “আপনারা আমার সেনাপতি ভীষ্মকে রক্ষা করিবেন।” কিন্তু সেই বৃদ্ধ ভীষ্ম যুবার অপেক্ষাও উদ্যমশীল-তিনি সেই সময়ে সিংহনাদ করিয়া শঙ্খধ্বনি করিলেন-(শঙ্খ তখনকার bugle) । তাঁহার শঙ্খধ্বনি শুনিয়া উৎসাহে বা প্রত্যুত্তরে উভয় সৈন্যস্থ যোদ্ধৃগণ সকলেই শঙ্খধ্বনি করিলেন। তখন উভয় দলে নানাবিধ রণবাদ্য বাজিয়া উঠিল-শঙ্খে, ভেরীতে, অন্যান্য বাদ্যের কোলাহলে গগন বিদীর্ণ হইল-আকাশ পৃথিবী তুমুল হইয়া উঠিল। সেই মহোৎসাহের সময়ে স্থিরচিত্ত অর্জ্জুন-যাঁহার উপরে কৌরব-জয়ের ভার-আপনার সারথি কৃষ্ণকে বলিলেন-“একবার উভয় সেনার মধ্যে রথ রাখ দেখি,-দেখি, কাহার সঙ্গে আমায় যুদ্ধ করিতে হইবে।” কৃষ্ণ, শ্বেতাশ্বযুক্ত মহারথ উভয় সেনার মধ্যে স্থাপিত করিলেন,-সর্ব্বজ্ঞ সর্ব্বকর্ত্তা বলিলেন, “এই দেখ।” অর্জ্জুন দেখিলেন, দুই দিকেই ত আপনার জন,-পিতৃব্য, পিতামহ, পুত্র, পৌত্র, মাতুল, শ্বশুর, শ্যালক, সুহৃৎ, সখা-তাঁহার গা কাঁপিয়া উঠিল, শরীরে রোমাঞ্চ হইল, মুখ শুকাইল, দেহ অবসন্ন হইল, মাথা ঘুরিল, হাত হইতে সেই মহাধনু গাণ্ডীব খসিয়া পড়িল। বলিলেন, “কৃষ্ণ! রাজ্য যাদের জন্য, তাদের মারিয়া রাজ্যে কি ফল?-আমি যুদ্ধ করিব না।” এই সংগ্রামক্ষেত্র, দুই দিকে দুই মহতী সেনা, এই তুমুল কোলাহল, রণবাদ্য এবং ঘোরতর উৎসাহ-সেই সময়ে এই মহাবীরের প্রথমে স্থৈর্য্য, তার পর তাঁহার হৃদয়ে সেই করুণ এবং মহান্ প্রশান্ত ভাব-এরূপ মহচ্চিত্র সাহিত্যজগতে দুর্লভ। “ন কাঙ্ক্ষে বিজয়ং কৃষ্ণ ন চ রাজ্যং সুখানি চ”-ঈদৃশী অমৃতময়ী বাণী আর কে কোথায় শুনিয়াছে?

13 কোন কোন পুস্তকে “সৈন্যদর্শনং” ইতি পাঠ আছে।