কমলাকান্ত-কমলাকান্তের জোবানবন্দী
কমলা। আমি কি একটা জাতি?
উকীল । তুমি কোন্ জাতীয়।
কমলা। হিন্দু জাতীয়।
উকীল । আঃ! কোন্ বর্ণ?
কমলা। ঘোরতর কৃষ্ণবর্ণ।
উকীল । দূর হোক ছাই! এমন সাক্ষীও আনে! বলি তোমার জাত আছে?
কমলা। মারে কে?
হাকিম দেখিলেন, উকীলের কথায় হইবে না। বলিলেন, “ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, কৈয়বর্ত্ত, হিন্দুর নানা প্রকার জাতি আছে জান ত-তুমি তার কোন জাতির ভিতর?”
কমলা। ধর্ম্মাবতার! এ উকীলের ধৃষ্টতা! দেখিতেছেন আমার গলায় যজ্ঞোপবীত, নাম বলিয়াছি চক্রবর্ত্তী-ইহাতেও যে উকীল বুঝেন নাই যে, আমি ব্রাহ্মণ, ইহা আমি কি প্রকারে জানিব?
হাকিম লিখিলেন, “জাতি ব্রাহ্মণ |” তখন উকীল জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার বয়স কত?”
এজ্লাসে একটা ক্লক ছিল-তাহার পানে চাহিয়া হিসাব করিয়া কমলাকান্ত বলিল, “আমার বয়স একান্ন বৎসর, দুই মাস, তের দিন, চারি ঘণ্টা, পাঁচ মিনিট ___”
উকীল । কি জ্বালা! তোমার ঘণ্টা মিনিট কে চায়?
কমলা। কেন, এইমাত্র প্রতিজ্ঞা করাইয়াছেন যে, কোন কথা গোপন করিব না।
উকীল । তোমার যা ইচ্ছা কর! আমি তোমায় পারি না। তোমার নিবাস কোথা?
কমলা। আমার নিবাস নাই।
উকীল । বলি, বাড়ী কোথা?
কমলা। বাড়ী দূরে থাক, আমার একটা কুঠারীও নাই।
উকীল । তবে থাক কোথা?
কমলা। যেখানে সেখানে।
উকীল । একটা আড্ডা ত আছে?
কমলা। ছিল, যখন নসী বাবু ছিলেন। এখন আর নাই।
উকীল । এখন আছ কোথা?
কমলা। কেন, এই আদালতে।
উকীল । কাল ছিলে কোথা?
কমলা। একখানা দোকানে।
হাকিম বলিলেন, “আর বকাবকিতে কাজ নাই-আমি লিখিয়া লইতেছি, নিবাস নাই। তারপর?
উকীল । তোমার পেশা কি?
কমলা। আমার আবার পেশা কি? আমি কি উকীল না বেশ্যা যে, আমার পেশা আছে?
উকীল । বলি, খাও কি করিয়া?
কমলা। ভাতের সঙ্গে ডাল মাখিয়া, দক্ষিণ হস্তে গ্রাস তুলিয়া, মুখে পুরিয়া গলাধঃকরণ করি।
উকীল । সে ডাল ভাত জোটে কোথা থেকে?
কমলা। ভগবান্ জোটালেই জোটে, নইলে জোটে না।
উকীল । কিছু উপার্জ্জন কর?
কমলা। এক পয়সাও না।
উকীল । তবে কি চুরি কর?
কমলা। তাহা হইলে ইতিপূর্ব্বেই আপনার শরণাগত হইতে হইত। আপনি কিছু ভাগও পাইতেন।