দেবী চৌধুরাণী
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
এদিকে ভবানী ঠাকুরকে বিদায় দিয়া, রঙ্গরাজ সাদা নিশান হাতে করিয়া, জলে নামিয়া লেফটেনাণ্ট সাহেবের ছিপে গিয়া উঠিল। সাদা নিশান হাতে দেখিয়া কেহ কিছু বলিল না। সে ছিপে উঠিলে সাহেব তাহাকে বলিলেন, “তোমরা সাদা নিশান দেখাইয়াছ, ধরা দিবে?”
র। আমরা ধরা দিব কি? যাঁহাকে ধরিতে আসিয়াছেন, তিনিই ধরা দিবেন, সেই কথা বলিতে আসিয়াছি।
সাহেব। দেবী চৌধুরাণী ধরা দিবেন?
র। দিবেন। তাই বলিতে আমাকে পাঠাইয়াছেন।
সা। আর তোমরা?
র। আমরা কারা?
সা। দেবী চৌধুরাণীর দল।
র। আমরা ধরা দিব না।
সা। আমি দলশুদ্ধ ধরিতে আসিয়াছি।
র। এই দল কারা? কি প্রকারে এই হাজার বরকন্দাজের মধ্যে দল বেদল চিনিবেন?
যখন রঙ্গরাজ এই কথা বলিল, তখন ভবানী ঠাকুর বরকন্দাজ সৈন্য লইয়া চলিয়া যান নাই। যাইবার উদ্যোগ করিতেছেন। সাহেব বলিল, “এই হাজার বরকন্দাজ সব সবাই ডাকাইত; কেন না, উহারা ডাকাইতের হইয়া সরকারের সঙ্গে যুদ্ধ করিতেছে।”
র। উহারা যুদ্ধ করিবে না, চলিয়া যাইতেছে দেখুন।
সাহেব দেখিলেন, বরকন্দাজ সৈন্য পলাইবার উদ্যোগ করিতেছে। সাহেব তর্জন গর্জন করিয়া বলিলেন, “কি! তোমরা সাদা নিশানের ভাণ করিয়া পলাইতেছ?”
রঙ্গরাজ। সাহেব, ধরিলে কবে যে পলাইলাম?
এখনও সিপাহীরা সাহেবের আজ্ঞা না পাইয়া নিশ্চেষ্ট হইয়া রহিল।
সাহেব ভাবিতেছিলেন, “উহাদের পশ্চাদ্ধাবিত হওয়া বৃথা। পিছু ছুটিতে ছুটিতে উহারা নিবিড় জঙ্গলের ভিতর প্রবেশ করিবে। একে রাত্রিকাল, তাহাতে মেঘাড়ম্বর, জঙ্গলে ঘোর অন্ধকার সন্দেহ নাই। আমার সিপাহীরা পথ চেনে না, বরকন্দাজেরা পথ চেনে। সুতরাং তাহাদের ধরা সিপাহীর সাধ্য নহে।” কাজেই সাহেব সে অভিপ্রায় পরিত্যাগ করিলেন। বলিলেন, “যাক, উহাদের চাই না। যে কথা হইতেছিল, তাই হৌক, তোমরা সকলে ধরা দিবে?”
র। একজনও না। কেবল দেবী রাণী।
সা। পীষ্! এখন আর লড়াই করিবে কে? এই যে কয়জন, তাহারা কি আর পাঁচ শ সিপাহীর সঙ্গে লড়াই করিতে পারিবে? তোমার বরকন্দাজ সেনা ত জঙ্গলের ভিতর প্রবেশ করিল, দেখিতেছি।
রঙ্গরাজ দেখিল, বাস্তবিক ভবানী ঠাকুরের সেনা জঙ্গলের ভিতর প্রবেশ করিল।
রঙ্গরাজ বলিল, “আমি অত জানি না। আমায় আমাদের প্রভু যা বলিয়াছেন, তাহাই বলিতেছি। বজরা পাইবেন না, বজরার যে ধন তাহা পাইবেন না, আমাদের কাহাকেও পাইবেন না। কেবল দেবী রাণীকে পাইবেন।
সা। কেন?
র। তা জানি না।