দেখিলাম, দোকানের মধ্যে নিবিড় অন্ধকার-কিছু দেখা যায় না। ডাকিয়া দোকানদারের উত্তর পাইলাম না-কেবল সর্ব্বপ্রাণিভীতিসাধক অনন্ত গর্জ্জন শুনিতে পাইলাম-অল্পালোকে দ্বারে ফলক-লিপি পড়িলাম।

যশের পণ্যশালা।
বিক্রেয়-অনন্ত যশ।
বিক্রেতা-কাল।
মূল্য-জীবন।
জীয়ন্তে কেহ এখানে প্রবেশ করিতে পারিবে না।
আর কোথাও সূযশ বিক্রয় হয় না।

পড়িয়া ভাবিলাম-আমার যশে কাজ নাই-কমলাকান্তের প্রাণ বাঁচিলে অনেক যশ হইবে।

বিচারের বাজারে গেলাম-দেখিলাম সেটা কসাইখানা। টুপি মাথায়, শামলা মাথায়-ছোট বড় কসাইসকল, ছুরি হাতে গোরু কাটিতেছে। মহিষাদি বড় বড় পশুসকল শৃঙ্গ নাড়িয়া ছুটিয়া পলাইতেছে;-ছাগ মেষ এবং গোরু প্রভৃতি ক্ষুদ্র পশুসকল ধরা পড়িতেছে। আমাকে দেখিয়া গোরু বলিয়া একজন কসাই বলিল, “এও গোরু কাটিতে হইবে।” আমি সেলাম করিয়া পলাইলাম।

আর বড় বাজার বেড়াইবার সাধ রহিল না-তবে প্রসন্নের উপর রাগ ছিল বলিয়া একবার দইয়েহাটা দেখিতে লাগিলাম-গিয়া প্রথমেই দেখিলাম যে, সেখানে খোদ কমলাকান্ত চক্রবর্ত্তী নামে গোয়ালা-দপ্তররূপ পচা ঘোলের হাঁড়ি লইয়া বসিয়া আছে-আপনি ঘোল খাইতেছে, এবং পরকে খাওয়াইতেছে।

তখন চমক হইল-চক্ষু চাহিলাম-দেখিলাম, নসী বাবুর বাড়ীতেই আছি। ঘোলের হাঁড়ি কাছে আছে বটে। প্রসন্ন এক হাঁড়ি ঘোল আনিয়া আমাকে সাধিতেছে-“চক্রবর্ত্তী মশাই-রাগ করিও না। আজ আর দুধ দই নাই-এই ঘোলটুকু আনিয়াছি-ইহার দাম দিতে হইবে না।”