বিবিধ প্রবন্ধ, দ্বিতীয় খণ্ড - বঙ্গে ব্রাহ্মণাধিকার
“বিদেঘোহ মাথবোহগ্নিং বৈশ্বানরং মুখে বভার। তস্য গোতমো রাহুগণ ঋষিঃ পুরোহিত আস। তস্মৈ স্মামন্ত্র্যমানো ন প্রতিশৃণোতি নৈন্মেহগ্নি বৈশ্বানরো মুখান্নিষ্পদ্যাতৈ ইতি তমৃগভির্হ্বয়িতুং দধ্রে। বীতিহোত্রং ত্বা কবে দ্যুমন্তং সমিধীমহি। অগ্নে বৃহন্তমধ্বরে বিদেঘেতি। স ন প্রতিশুশ্রাব। —উদগ্নে শূচস্তব শুক্রা ভ্রাজন্ত ইরতে | তব জ্যোতিংষ্যর্চ্চয়ো বিদেঘা ইতি | সহ নৈব প্রতিশুস্রাব | তং ত্বা ধৃত স্নবীমহে ইত্যেবাভিব্যাহারদথাস্য ধৃতকীর্ত্তাবেবাগ্নি বৈশ্বানরো মুখাদুজ্জজ্বাল তং ন শাশাক ধারয়িতুম্। সোহস্য মুখান্নিষ্পেদে স ইমাং পৃথিবীং প্রপাদঃ। তর্হি বিদেঘো মাথব আস সরস্বত্যাম্। স তত এব প্রাঙ্দহন্নভীয়ায়েমাং পৃথিবীম্। তং গৌতমশ্চ রাহুগণো বিদেঘশ্চ মাথবঃ পশ্চাদ্ দহন্তমন্বীয়তুঃ। স ইমাঃ সর্ব্বা নদীরতিদদাহ। সদানীরেত্যুত্তরাদ্ গিরের্নিধাবতি তাং হৈন নাতিদদাহ তাং হ স্ম তাং পুরা ব্রাহ্মণা ন তরন্তি অনতিদগ্ধা অগ্নিনা বৈশ্বানরেণেতি। তত এতর্হি প্রাচীনং বহবো ব্রাহ্মণাঃ। তদ্ হে অক্ষেত্রতরমিবাস স্রাবিতরমিব অস্বদিতমগ্নিনা বৈশ্বানরেণেতি। তদুহৈতর্হি ক্ষেত্ররমিব ব্রাহ্মণা উ হি নূনমেতদ্ যজ্ঞৈসিষ্বিদন্। সাপি জঘন্যে নৈদাঘে কোপয়তি তাবৎ সীতাহনতি দগ্ধা হ্যগ্নিতা বৈশ্বানরেণ। স হোবাচ বিদেঘো মাথাবঃ ক্কাহং ভবানি ইতি। অতএব তে প্রাচীনং ভুবনমিতি হোবাচ। সৈষাপ্যেতর্হি কোশলবিদেহানাং মর্য্যাদা তেহি মাথবাঃ।”
এক্ষণে সদানীরা নামে কোন নদী নাই। কিন্তু হেমচন্দ্রাভিধানে এবং অমরকোষে করতোয়া নদীর নাম সদানীরা বলিয়া উক্ত হইয়াছে। কিন্তু দেখা যাইতেছে যে, সে এ সদানীরা নদী নহে; কেন না, শতপথ ব্রাহ্মণেই কথিত হইয়াছে যে, এই নদী কোশল (অযোধ্যা) এবং বিদেহ রাজ্যের (মিথিলা) মধ্যসীমা।
ইহাতে এই নিশ্চিত হইতেছে যে, অতি পূর্ব্বকালে মিথিলাতে ব্রাহ্মণ আসে নাই, কিন্তু যখন শতপথ ব্রাহ্মণ (ইহা বেদান্তর্গত) সঙ্কলিত হয়, তখন মিথিলায় ব্রাহ্মণ বাস করিত। শতপথ ব্রাহ্মণ প্রণয়নের বহুকাল পূর্ব্ব হইতেই আর্য্যগণ মিথিলাতে বাস করিত, সন্দেহ নাই; কেন না, ঐ ব্রাহ্মণে বিদেহাধিপতি জনক সম্রাট্ বলিয়া বাচ্য হইয়াছেন। নবীন রাজ্যের রাজা প্রাচীনদিগের নিকট সম্রাট্ নাম লাভ করিবার সম্ভাবনা কি? যখন মিথিলায় এতকাল হইতে ব্রাহ্মণের বাস, তখন যে ব্রাহ্মণেরা তথা হইতে আধুনিক বাঙ্গালার উত্তরাংশে বিস্তৃত হয়েন নাই, এমত বোধও হয় না। তবে সে সময়ে বঙ্গদেশ স্পৃহণীয় বাসস্থান ছিল না, অথবা একেবারেই বাসযোগ্য ছিল না, এমত কেহ কেহ বলিতে পারেন। তত্ত্ববিদেরা প্রমাণ করিয়াছে যে, অতি পূর্ব্বকালে বঙ্গদেশ ছিল না; হিমালয়ের মূল পর্য্যন্ত সমুদ্র ছিল। অদ্যাপি সমুদ্রবাসী জীবের দেহাবশেষ হিমালয় পর্ব্বতে পাওয়া গিয়া থাকে। কি প্রকারে গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্রের মুখানীত কর্দ্দমে বঙ্গদেশ সৃষ্টি, তাহা সর্ চার্লস্ লায়েল প্রণীত “Principles of Geology” নামক গ্রন্থে বর্ণিত হইয়াছে।