বঙ্গে ব্রাহ্মণাধিকার*
প্রথম প্রস্তাব

বঙ্গে ব্রাহ্মণাধিকার কত দিন হইতে? চিরকাল নহে। ইউরোপীয় পণ্ডিতেরা এক প্রকার স্থির করিয়াছেন যে, আর্য্যজাতীয়েরা জাতীয়েরা ভারতবর্ষের আদিমবাসী নহে। তাঁহারা বলেন যে, ইরাণ বা তৎসন্নিহিত কোন স্থানে আর্য্যজাতীয়দিগের আদিম বাস। তথা হইতে তাঁহারা নানা দেশে গিয়া বসতি করিয়াছেন। এবং তথা হইতেই ভারতবর্ষে আসিয়া বসতি করিয়াছিলেন। প্রথম কালে আর্য্য জাতি কেবল পঞ্জাবমধ্যে বসতি করিতেন। তথা হইতে ক্রমে পূর্ব্বদেশ জয় করিয়া অধিকার করিয়াছেন।

যে সকল প্রমাণের উপর এই সকল কথা নির্ভর করে, তাহা সুশিক্ষিত মাত্রেই অবগত আছেন, এবং সুশিক্ষিত মাত্রেরই নিকট সে সকল প্রমাণ গ্রাহ্য হইয়াছে। অতএব তাহার কোন বিচারে আমরা প্রবৃত্ত হইব না। যদি আর্য্যজাতীয়েরা উত্তর পশ্চিম হইতে ক্রমে ক্রমে পূর্ব্বভাগে আসিয়াছিলেন, তবে ইহা অবশ্য স্বীকর্ত্তব্য যে, অনেক পরে বঙ্গদেশে আর্য্যজাতীয়েরা আসিয়া বৈদিক ধর্ম্ম প্রচার করিয়াছিলেন।

“সরস্বতীদৃষদ্বত্যোর্দেবনদ্যোর্যদন্তরম্।
তং দেবনির্ম্মিতং দেশং ব্রহ্মাবর্ত্তং প্রচক্ষতে ||
তস্মিন্ দেশে য আচারঃ পারম্পর্য্যক্রমাগতঃ
বর্ণানাং সান্তরালানাং স সদাচার উচ্যতে ||”

এই বচন মনুসংহিতোদ্ধৃত। অতএব বুঝা যাইতেছে যে, যৎকালে মানবধর্ম্মশাস্ত্র সংগৃহীত হইয়াছিল, তৎকালে বঙ্গদেশ শুদ্ধাচারবিশিষ্ট পুণ্য প্রদেশের মধ্যে গণ্য হইত না। অথচ আর্য্যাবর্ত্তের একাংশ বলিয়া গণিত হইত। কেন না, ঐ বচনদ্বয়ের কিছু পরেই মনুতে আছে যে—

“আসমুদ্রাত্ত বৈ পূর্ব্বাদাসুদ্রাত্ত পশ্চিমাৎ।
তয়োরেবান্তরং গির্য্যো# রার্য্যাবর্ত্তং বিদুর্বুধাঃ ||”

কিন্তু বঙ্গদেশ তৎকালে আর্য্যাবর্ত্তের অংশমধ্যে গণনীয় হইলেও, তথায় আর্য্যধর্ম্ম প্রচলিত ছিল, এমত বোধ হয় না। কেন না, মনুসংহিতায় অন্যত্র আছে,—

“শনকৈস্তু ক্রিয়ালোপাদিমাঃ ক্ষত্রিয়জাতয়ঃ।
বৃষলত্বং গতা লোকে ব্রাহ্মণাদর্শনেন চ ||
পৌণ্ড্রকাশ্চৌড্রদ্রবিড়াঃ কাম্বোজা যবনাঃ শকাঃ।
পারদা পহ্ণবাশ্চৈনাঃ কিরাতা দরদাঃ খশাঃ ||”
*বঙ্গদর্শন, ১২৮০।
#বিন্ধ্যাচল ও হিমবৎ।