হনূমান্ তখন বাবু মহাশয়কে লেজে করিয়া ঊর্দ্ধ্বে তুলিয়া ফেলিলেন, বাবুর টুপি, চসমা, এবং চাবুক পড়িয়া গেল; কোট-পকেট হইতে ঘড়ি বাহির হইয়া চেনে ঝুলিতে লাগিল। তখন বাবুর মুখ শুকাইল-ডাকিলেন, “ও হনূমান্ মহাশয়, ঘাট হয়েছে, ছাড়! ছাড়! ছাড়! রক্ষা কর! গরিবের প্রাণ যায় |”

তখন হনূমান্, বাবুর প্রতি সদয় হইয়া তাঁহাকে ভূতলে স্থাপন পূর্ব্বক লাঙ্গুলপাশ হইতে তাঁহাকে বিমুক্ত করিলেন। অবসর পাইয়া বাবু টুপি, চসমা, চাবুক কুড়াইয়া করিলেন। হনূমান্ বলিলেন, “মহাশয়! দুঃখিত হইবেন না। আপনার বুলি ইংরেজি, বেশ কিষ্কিন্ধা, এবং মূর্খতা পাহাড়ে-রকম দেখিয়া আপনার জাতি নিরুপণার্থ আপনাকে এতটা কষ্ট দিয়াছি। এক্ষণে___”

বাবু। এক্ষণে কি?

হনূ। এক্ষণে বুঝিয়াছি যে, আপনার জন্ম বঙ্গদেশীয় কোন মহিলার গর্ব্ভে। এখন আপনি ক্লান্ত আছেন-একটা কদলী ভোজন করিবেন?

এখন বাবুজির যেরূপ জিব শুকাইয়া আসিয়াছিল, তাহাতে একটু সরস কদলী ভোজন অতিশয় আবশ্যক বলিয়া বোধ হইল-তিনি তখন প্রীত হইয়া উত্তর করিলেন,করিলেন,“With the greatest pleasure.”

হনূ। আপনার যে দেশে জন্ম, কদলী এবং বার্ত্তাকু অনুসন্ধানে আমি মধ্যে মধ্যে সে দেশে গমন করিয়া থাকি; এবং তদ্দেশীয়া সুন্দরীগণ বড়ি নামে যে সুস্বাদু ভোজ্য প্রস্তুত করিয়া থাকে, তাহাও কদাপি বিনানুমতিতে রামানুচর- সেবায় নিযুক্ত করিয়াছি। অতএব আমি বাঙ্গালা উত্তম বুঝি। অতএব মাতৃভাষাতেই আমার সঙ্গে বাক্যালাপ কর।

বাবু। তার আশ্চর্য্য কি? আপনি কলা দিতে চাহিতেছেন? আমি অতিশয় আহ্লাদের সহিত আপনার কদলী ভক্ষণ করিব।

হনূমান তখন বাবু মহাশয়কে এক ছড়া কলা ফেলিয়া দিলেন। যে দেবদুর্ল্লভ কদলী খাইয়া বাবু অতিশয় প্রীত হইলেন। হনূমান্ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন কলা?” বাবু। অতি মিষ্ট-delicious!

হনূ। হে টুপ্যাবৃত মহাপুরুষ! মাতৃভাষায় কথা কও।

বাবু। ওটা আমার ভুল হইয়াছে, এইবার আমাকে Excuse করুন-

হনূ। তাই বা কাকে বলে?

বাবু। আমাকে মাপ করুন-আমি বড়-কি বলব?-ইংরেজি কথাটা forgetful- তার বাঙ্গালা কি?

হনূ। বৎস! তোমার কথোপকথনে আমি প্রীত হইয়াছি। তুমি আরও কলা খাইতে পার। যত ইচ্ছা তত খাইতে পার। গাছে আছে, পাড়িয়া দিতেছি। আর আমা হইতে তোমার যদি কোন কার্য্য সিদ্ধ হইতে পারে, তবে তাহাও আমাকে বল, আমি তৎসাধনে তৎপর হইব।

বাবু। ধন্যবাদ, হে, আমার প্রিয় বানর মহাশয়! এক্ষণে আপনার প্রতি আমি অতিশয় বাধ্য বোধ করিব, আপনি যদি দয়ালুরূপে আমাকে একটি বিষয় বুঝাইয়া দেন।