বাবাজি। তোমাকে ভাবিলেই তোমার শক্তি জানিলাম না। অগ্নিতে যে কখন হাত দেয় নাই, সে অগ্নি দেখিলেই বুঝিতে পারে না যে, অগ্নিতে হাত পুড়িয়া যাইবে| পাঁজা পুড়িতেছে দেখিয়া, যে আর কখন অগ্নি দেখে নাই, সে বুঝিতে পারে না যে, আগুনের আলো করিবার শক্তি আছে। অতএব শক্তি এবং শক্তির আলোচনা পৃথক্ করিয়া না করিলে শক্তিকে বুঝিতে পারিবে না। রুদ্রও নিরাকার, শক্তিও নিরাকার। যে অজ্ঞান এবং নিরাকারের স্বরূপচিন্তায় অক্ষম, তাহাকে উপাসনার্থ উভয়েরই রূপ কল্পনা করিতে হয়।

আমি। কিন্তু বৈষ্ণব বিষ্ণুরই উপাসনা করিয়া থাকে, রুদ্রের উপাসনা করে না। অতএব রুদ্রাণীর প্রসাদ ভোজন আপনার পক্ষে অকর্ত্তব্য।

বাবাজি। বিষ্ণু আমাকে যে উদর দিয়াছেন, রুদ্রাণীর প্রসাদে যে তাহা পূরিবে না, এমন আদেশ কিছু করেন নাই। কিন্তু সে কথা থাক। রুদ্রাণী বিষ্ণুরই শক্তি।

আমি। সে কি? রুদ্রাণী ত রুদ্রের শক্তি?

বাবাজি। বিষ্ণুই রুদ্র।

আমি। এ সব অতি অশ্রদ্ধেয় কথা। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর বা রুদ্র, তিন জন পৃথক্। একজন সৃষ্টি করেন, একজন পালন করেন, একজন লয় করেন। তবে বিষ্ণু রুদ্র হইলেন কি প্রকারে?

বাবাজি। যে বাবুর বাড়ী বসিয়া ভোজন করিতেছি, ইনি করেন কি জান?

আমি। জানি। ইনি জমিদারি করেন।

বাবাজি। আর কিছু করেন না?

আমি। পাটের ব্যবসাও আছে।

বাবাজি। আর কিছু করেন?

আমি। টাকা ধার দিয়া সুদ খান।

বাবাজি। ভাল। এখন আমি যদি বাহিরে গিয়া রামকে বলি যে, আমি আজ একজন জমিদার বাড়ী খাইতেছি, শ্যামকে বলি যে, আমি একজন ব্যবসাদারের বাড়ী খাইয়াছি, আর গোপালকে বলি যে, আমি একজন মহাজনের বাড়ী খাইয়াছি, তাহা হইলে তিন জনের কথা বলা হইবে? না একজনেরই কথা বলা হইবে।

আমি। একজনেরই কথা। তিন একই।

বাবাজি। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর তিনই এক। একজনই সৃষ্টিকর্ত্তা, পালনকর্ত্তা এবং সংহারকর্ত্তা। হিন্দুধর্ম্মে এক ঈশ্বর ভিন্ন তিন ঈশ্বর নাই।

আমি। তবে তিন জনকে পৃথক্ পৃথক্ উপাসনা করে কেন?

বাবাজি। তুমি যদি এই বাবুকে বিশেষ করিয়া জানিতে চাও, তবে তাঁর সকল কাজগুলি পৃথক্ পৃথক্ করিয়া বুঝিতে হইবে। তিনি জমিদার হইয়া কিরূপে জমিদারি করেন, তাহা বুঝিতে হইবে, তিনি ব্যবসাদার হইয়া কি প্রণালীতে ব্যবসা করেন, তাহা বুঝিতে হইবে, আর তিনি মহাজনীতে কি করেন, তাহাও বুঝিতে হইবে। তেমনি ঈশ্বরোপাসনায় তাঁহার কৃত সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় পৃথক্ পৃথক্ বুঝিতে হইবে | এই জন্য ত্রিদেবের উপাসনা | এক জনেরই কার্য্যানুসারে তিনটি নাম দেওয়া হইয়াছে। তিন জনের তিনটি নাম নহে।