রজনী
চতুর্থ পরিচ্ছেদ : লবঙ্গলতার কথা
আমি অমরনাথকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “তুমি কি রজনীকে বিবাহ করিবে?”
অ। করিব-স্থির।
আমি। এখনও স্থির? রজনীর বিষয় ত রজনী আমাকে দিতেছে।
অ। আমি রজনীকে বিবাহ করিব-বিষয় বিবাহ করিব না।
আমি। বিষয়ের জন্যই ত রজনীকে বিবাহ করিতে চাহিয়াছিলে?
অ। স্ত্রীলোকের মন এমনই কদর্য।
আমি। আমাদের উপর এত অভক্তি কতদিন?
অ। অভক্তি নাই-তাহা হইলে বিবাহ করিতে চাহিতাম না।
আমি। কিন্তু বাছিয়া বাছিয়া অন্ধ কন্যাতে এত অনুরাগ কেন? তাই বিষয়ের কথা বলিতেছিলাম।
অ। তুমি বৃদ্ধতে এত অনুরক্ত কেন? বিষয়ের জন্য কি?
আমি। কাহারও সাক্ষাতে তাহার স্বামীকে বুড়া বলিতে নাই। আমার সঙ্গে রাগারাগি কেন? তুমি কি মুখরা স্ত্রীলোকের মুখকে ভয় কর না?
(কিন্তু রাগারাগি আমার আন্তরিক বাসনা।)
অমরনাথ বলিল, “ভয় করি বই কি? রাগের কথা কিছু বলি নাই। তুমি মিত্রজাকে ভালবাস, আমিও রজনীকে তেমনি ভালবাসি !”
আমি। কটাক্ষের গুণ নাকি?
অ। না। কটাক্ষ নাই বলিয়া। তুমিও কাণা হইলে আরও সুন্দর হইতে।
আমি। সে কথা মিত্রজাকে জিজ্ঞাসা করিব, তোমাকে নহে। সম্প্রতি তুমিও যেমন রজনীকে ভালবাস, আমিও রজনীকে তেমনি ভালবাসি।
অ। তুমিও রজনীকে বিবাহ করিতে চাও নাকি?
আমি। প্রায়। আমি নিজে তাহাকে বিবাহ না করি, তাহার ভাল বিবাহ দিতে চাই। তোমার সঙ্গে তাহার বিবাহ হইতে দিব না।
অ। আমি সুপাত্র। রজনীর এরূপ আর জুটিতেছে না।
আমি। তুমি কুপাত্র। আমি সুপাত্র জুটাইয়া দিব।
অম। আমি কুপাত্র কিসে?
আমি। কামিজটা খুলিয়া পিঠ বাহির কর দেখি?
অমরনাথের মুখ শুকাইয়া কালো হইয়া গেল। অতি দু:খিতভাবে বলিল, “ছি! লবঙ্গ!”
আমার দু:খ হইল, কিন্তু দু:খ দেখিয়া ভুলিলাম না। বলিলাম, “একটি গল্প বলিব শুনিবে?”
আমি কথা চাপা দিতেছি মনে করিয়া অমরনাথ বলিল, “শুনিব |”
আমি তখন বলিতে লাগিলাম, “প্রথম যৌবনকালে লোকে আমাকে রূপবতী বলিত___”
অ। এটা যদি গল্প, তবে সত্য কোন্ কথা?
আমি। পরে শোন। সেই রূপ দেখিয়া এক চোর মুগ্ধ হইয়া, আমার পিত্রালয়ে, যে ঘরে আমি এক পরিচারিকা সঙ্গে শয়ন করিয়াছিলাম, সেই ঘরে সিঁধ দিল।