গিরিজায়া তখন মনে মনে বলিতে লাগিল, “আমি ত মৃণালিনীর দাসী-মৃণালিনী এ গৃহের কর্ত্রী হইলেন অথবা হইবেন-তবে ত বাড়ীর গৃহকর্ম করিবার অধিকার আমারই |” এইরূপ মনকে প্রবোধ দিয়া গিরিজায়া একগাছা ঝাঁটা সংগ্রহ করিল এবং যে ঘরে দিগ্বিজয় শয়ন করিয়া আছে, সেই ঘরে প্রবেশ করিল। দিগ্বিজয় চক্ষু বুজিয়া আছে, পদধ্বনিতে বুঝিল যে, গিরিজায়া আসিল-মনে বড় আনন্দ হইল-তবে ত গিরিজায়া তাহাকে ভালবাসে। দেখি, গিরিজায়া কি বলে? এই ভাবিয়া দিগ্বিজয় চক্ষু বুজিয়াই রহিল। অকস্মাৎ তাহার পৃষ্ঠে দুম দাম করিয়া ঝাঁটার ঘা পড়িতে লাগিল। গিরিজায়া গলা ছাড়িয়া বলিতে লাগিল, “আ: মলো, ঘরগুলায় ময়লা জমিয়া রহিয়াছে দেখ-এ কি? এক মিন্‌সে! চোর না কি? মলো মিন্‌সে, রাজার ঘরে চুরি!” এই বলিয়া আবার সম্মার্জনীর আঘাত। দিগ্বিজয়ের পিট ফাটিয়া গেল।

“ও গিরিজায়া, আমি! আমি!”

“আমি! আরে তুই বলিয়াই ত খাঙ্গরা দিয়া বিছাইয়া দিতেছি |” এই বলিবার পর আবার বিরাশি সিক্কা ওজনে ঝাঁটা পড়িতে লাগিল।

“দোহাই! দোহাই! গিরিজায়া! আমি দিগ্বিজয়!”

“আবার চুরি করিতে এসে-আমি দিগ্বিজয়! দিগ্বিজয় কে রে মিন্‌সে!” ঝাঁটার বেগ আর থামে না।

দিগ্বিজয় এবার সকাতরে কহিল, “গিরিজায়া, আমাকে ভুলিয়া গেলে?”

গিরিজায়া বলিল, “তোর আমার সঙ্গে কোন্ পুরুষে আলাপ রে মিন্‌সে?”

দিগ্বিজয় দেখিল নিস্তার নাই - রণে ভঙ্গ দেওয়াই পরামর্শ। দিগ্বিজয় তখন অনুপায় দেখিয়া ঊর্ধ্বশ্বাসে গৃহ হইতে পলায়ন করিল। গিরিজায়া সম্মার্জনী হস্তে তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবিত হইল।