রজনী
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
আমি। বোধ হইতেছে।
বি। যদি সংশয় থাকে, তবে এখনই তাহা ভঞ্জন হইবে। পড়িয়া যাউন।
পড়িতে লাগিলাম যে, সে বলিতেছে, “আমার ছয় মাসের একটি কন্যা আছে। এক সপ্তাহ হইল, তাহার অন্নপ্রাশন দিয়াছি। অন্নপ্রাশনের দিন বৈকালে তাহার বালা চুরি গিয়াছে |”
এই পর্যন্ত পড়িয়া দেখিলে, বিষ্ণুরাম বলিলেন, “দেখুন, কত দিনের জোবানবন্দী?”
জোবানবন্দীর তারিখ দেখিলাম, জোবানবন্দী ঊনিশ বৎসরের।
বিষ্ণুরাম বলিলেন, “ঐ কন্যার বয়স এক্ষণে হিসাবে কত হয়?”
আমি। ঊনিশ বৎসর কয় মাস-প্রায় কুড়ি।
বি। রজনীর বয়স কত অনুমান করেন?
আমি। প্রায় কুড়ি।
বি। পড়িয়া যাউন; হরেকৃষ্ণ কিছু পরে বালিকার নামোল্লেখ করিয়াছেন।
আমি পড়িতে লাগিলাম। দেখিলাম যে, এক স্থানে হরেকৃষ্ণ পুন:প্রাপ্ত বালা দেখিয়া বলিতেছেন, “এই বালা আমার কন্যা রজনীর বালা বটে |”
আর বড় সংশয়ের কথা রহিল না-তথাপি পড়িতে লাগিলাম। প্রতিবাদীর মোক্তার হরেকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করিতেছে, “তুমি দরিদ্র লোক। তোমার কন্যাকে সোণার বালা দিলে কি প্রকারে?” হরেকৃষ্ণ উত্তর দিতেছে, “আমি গরীব, কিন্তু আমার ভাই মনোহর দাস দশ টাকা উপার্জন করেন। তিনি আমার মেয়েকে সোণার গহনাগুলি দিয়াছেন |”
তবে যে এই হরেকৃষ্ণ দাস আমাদিগের মনোহর দাসের ভাই, তদ্বিষয়ে আর সংশয়ের স্থান রহিল না।
পরে মোক্তার আবার জিজ্ঞাসা করিতেছেন, “তোমার ভাই তোমার পরিবার বা তোমার আর কাহাকে কখন অলঙ্কার দিয়াছে?”
উত্তর। না।
পুনশ্চ প্রশ্ন। সংসার খরচ দেয়?
উত্তর। না।
প্রশ্ন। তবে তোমার কন্যাকে অন্নপ্রাশনে সোণার গহনা দিবার কারণ কি?
উত্তর। আমার এই মেয়েটি জন্মান্ধ। সেজন্য আমার স্ত্রী সর্বদা কাঁদিয়া থাকে। আমার ভাই ও ভাইজ তাহাতে দু:খিত হইয়া, আমাদিগের মনোদু:খ যদি কিছু নিবারণ হয়, এই ভাবিয়া অন্নপ্রাশনের সময় মেয়েটিকে এই গহনাগুলি দিয়াছিলেন।
জন্মান্ধ! তবে যে সে এই রজনী, তদ্বিষয়ে আর সংশয় কি?
আমি হতাশ হইয়া জোবানবন্দী রাখিয়া দিলাম। বলিলাম, “আমার আর বড় সন্দেহ নাই |”
বিষ্ণুরাম বলিলেন, “অত অল্প প্রমাণে আপনাকে সন্তুষ্ট হইতে বলি না। আর একটা জোবানবন্দীর নকল দেখুন |”
দ্বিতীয় জোবানবন্দীও দেখিলাম যে, উহাও ঐ কথিত বালাচুরির মোকদ্দমায় গৃহীত হইয়াছিল। এই জোবানবন্দীতে বক্তা রাজচন্দ্র দাস। তিনি একমাত্র কুটুম্ব বলিয়া ঐ অন্নপ্রাশনে উপস্থিত ছিলেন। তিনি হরেকৃষ্ণের শ্যালীপতি বলিয়া আত্মপরিচয় দিতেছেন। এবং চুরির বিষয়সকল সপ্রমাণ করিতেছেন।