বালিকা না তরুণী? ইহা হেমচন্দ্র তাহাকে দেখিয়া নিশ্চিত করিতে পারিলেন না।

বীণানিন্দিতস্বরে সুন্দরী কহিলেন, “তুমি পিতামহকে কি বলিতেছিলে? তোমার কথা উনি শুনিতে পাইবেন কেন?”

হেমচন্দ্র কহিলেন, “তাহা ত পাইলেন না দেখিলাম। তুমি কে?”

বালিকা বলিল, “আমি মনোরমা |”

হে। ইনি তোমার পিতামহ?

ম। তুমি পিতামহকে কি বলিতেছিলে?

হে। শুনিলাম ইনি এ গৃহ ত্যাগ করিয়া যাইবার উদ্যোগ করিতেছেন। আমি তাই নিবারণ করিতে আসিয়াছি।

ম। এ গৃহে এক রাজপুত্র আসিয়াছেন। তিনি আমাদিগকে থাকিতে দিবেন কেন?

হে। আমিই সেই রাজপুত্র। আমি তোমাদিগকে অনুরোধ করিতেছি, তোমরা এখানে থাক।

ম। কেন?

এ ‘কেন’র উত্তর নাই। হেমচন্দ্র অন্য উত্তর না পাইয়া কহিলেন, “কেন? মনে কর, যদি তোমার ভাই আসিয়া এই গৃহে বাস করিত, সে কি তোমাদিগকে তাড়াইয়া দিত?”

ম। তুমি কি আমার ভাই?

হে। আজি হইতে তোমার ভাই হইলাম। এখন বুঝিলে?

ম। বুঝিয়াছি। কিন্তু ভগিনী বলিয়া আমাকে কখন তিরস্কার করিবে না ত?

হেমচন্দ্র মনোরমার কথার প্রণালীতে চমৎকৃত হইতে লাগিলেন। ভাবিলেন, “এ কি অলৌকিক সরলা বালিকা? না উন্মাদিনী?” কহিলেন, “কেন তিরস্কার করিব?”

ম। যদি আমি দোষ করি?

হে। দোষ দেখিলে কে না তিরস্কার করে?

মনোরমা ক্ষুণ্ণভাবে দাঁড়াইয়া রহিলেন, বলিলেন, “আমি কখন ভাই দেখি নাই; ভাইকে কি লজ্জা করিতে হয়?”

হে। না।

ম। তবে আমি তোমাকে লজ্জা করি না-তুমি আমাকে লজ্জা করিবে?

হেমচন্দ্র হাসিলেন-কহিলেন, “আমার বক্তব্য তোমার পিতামহকে জানাইতে পারিলাম না,-তাহার উপায় কি?”

ম। আমি বলিতেছি।

এই বলিয়া মৃদু মৃদু স্বরে জনার্দনের নিকট হেমচন্দ্রের অভিপ্রায় জানাইলেন।

হেমচন্দ্র দেখিয়া বিস্মিত হইলেন যে, মনোরমার সেই মৃদু কথা বধিরের বোধগম্য হইল।

ব্রাহ্মণ আনন্দিত হইয়া রাজপুত্রকে আশীর্বাদ করিলেন। এবং কহিলেন, “মনোরমা, ব্রাহ্মণীকে বল, রাজপুত্র তাঁহার নাতি হইলেন-আশীর্বাদ করুন |” এই বলিয়া ব্রাহ্মণ স্বয়ং “ব্রাহ্মণি! ব্রাহ্মণি!” বলিয়া ডাকিতে লাগিলেন। ব্রাহ্মণী তখন স্থানান্তরে গৃহকার্য ব্যাপৃতা ছিলেন-ডাক শুনিতে পাইলেন না। ব্রাহ্মণ অসন্তুষ্ট হইয়া বলিলেন, “ব্রাহ্মণীর ঐ বড় দোষ কাণে কম শোনেন।”