মৃণালিনী
মৃ। তুমি কি ব্রাহ্মণকে দংশন করিয়াছিলে?
গি। তা ক্ষতি কি? বামুন বৈ ত গরু নয়?
মৃ। কিন্তু তুমি যে গান করিতে করিতে চলিয়া গেলে শুনিলাম?
গি। তার পর তোমাদের কথাবার্তার শব্দ শুনিয়া ফিরিয়া আসিয়াছিলাম। দেখে মনে হলো, মিন্সে আমাকে একদিন “কালা পিঁপ্ ড়ে” বলে ঠাট্টা করেছিল। সে দিন হুল ফুটানটা বাকি ছিল। সুযোগ পেয়ে বামুনের, ঋণ শোধ দিলাম। এখন তুমি কোথা যাইবে?
মৃ। তোমার ঘরদ্বার আছে?
গি। আছে। পাতার কুঁড়ে।
মৃ। সেখানে আর কে থাকে?
গি। এক বুড়ী মাত্র। তাহাকে আয়ি বলি।
মৃ। চল তোমার ঘরে যাব।
গি। চল। তাই ভাবিতেছিলাম।
এই বলিয়া দুই জনে চলিল। যাইতে যাইতে গিরিজায়া কহিল, “কিন্তু সে ত কুঁড়ে। সেখানে কয় দিন থাকিবে?”
মৃ। কালি প্রাতে অন্যত্র যাইব।
গি। কোথা? মথুরায়?
মৃ। মথুরায় আমার আর স্থান নাই।
গি। তবে কোথায়?
মৃ। যমালয়।
এই কথার পর দুইজনে ক্ষণেক কাল চুপ করিয়া রহিল। তারপর মৃণালিনী বলিল, “এ কথা কি তোমার বিশ্বাস হয়?”
গি। বিশ্বাস হইবে না কেন? কিন্তু সে স্থান ত আছেই, যখন ইচ্ছা তখনই যাইতে পারিবে। এখন কেন আর এক স্থানে যাও না?
মৃ। কোথা?
গি। নবদ্বীপ।
মৃ। গিরিজায়া, তুমি ভিখারিণী বেশে কোন মায়াবিনী। তোমার নিকট কোন কথা গোপন করিব না। বিশেষ তুমি হিতৈষী। নবদ্বীপেই যাইব স্থির করিয়াছি।
গি। একা যাইবে?
মৃ। সঙ্গী কোথায় পাইব?
গি। (গায়িতে গায়িতে)
“মেঘ দরশনে হায়, চাতকিনী ধায় রে।
সঙ্গে যাবি কে কে তোরা আয় আয় আয় রে ||
মেঘেতে বিজলি হাসি, আমি বড় ভালবাসি,
যে যাবি সে যাবি তোরা, গিরিজায়া যায় রে ||”
মৃ। এ কি রহস্য, গিরিজায়া?
গি। আমি যাব।
মৃ। সত্য সত্যই?
গি। সত্য সত্যই যাব।
মৃ। কেন যাবে?
গি। আমার সর্বত্র সমান। রাজধানীতে ভিক্ষা বিস্তর।