শ্রী। না। তা বড় লক্ষ্য করি নাই।

জ। তবে সে মনোযোগ তোমার লাবণ্যের প্রতি,--ভগবৎপ্রসঙ্গে নয়।

শ্রী। তবে, এখন কি কর্তব্য?

জ। তুমি করিবে কি? তুমি ত বলিয়াছ যে, তুমি সন্ন্যাসিনী, তোমার কর্ম নাই?

শ্রী। যেমন শিখাইয়াছ।

জ। আমি কি তাই শিখাইয়াছিলাম? আমি যে শিখাই নাই যে, অনুষ্ঠেয় যে কর্ম, অনাসক্ত হইয়া ফলত্যাগপূর্বক তাহার নিয়ত অনুষ্ঠান করিলেই কর্মত্যাগ হইল, নচেৎ হইল না?14 স্বামিসেবা কি তোমার অনুষ্ঠেয় কর্ম নহে?

শ্রী। তবে আমাকে পলাইতে পরামর্শ দিয়াছিলে কেন?

জ। তুমি যে বলিলে, তোমার শত্রু, রাজা নিয়া বার জন। যদি ইন্দ্রিয়গণ তোমার বশ্য নয়, তবে তোমার স্বামিসেবা সকাম হইয়া পড়িবে। অনাসক্তি ভিন্ন কর্মানুষ্ঠানে কর্মত্যাগ ঘটে না। তাই তোমাকে পলাইতে বলিয়াছিলাম। যার যে ভার সয় না, তাকে সে ভার দিই না। “পদং সহেত ভ্রমরস্য পেলবং” ইত্যাদি উপমা মনে আছে ত?

শ্রী বড় লজ্জিতা হইল। ভাবিয়া বলিল, “কাল উহার উত্তর দিব |”

সে দিন আর সে কথা হইল না। শ্রী সে দিন জয়ন্তীর সঙ্গে বড় দেখা-সাক্ষাৎ করিল না। পরে জয়ন্তী তাহাকে ধরিল। বলিল, “আমার কথার কি উত্তর সন্ন্যাসিনী?”

শ্রী বলিল, “আমায় আর একবার পরীক্ষা কর |”

জয়ন্তী বলিল, “এ কথা ভাল। তবে মহম্মদপুর চল। তোমার আমার অনুষ্ঠেয় কর্ম কি, পথে তাহার পরামর্শ করিতে করিতে যাইব |”

দুই জনে তখন পুনর্বার মহম্মদপুর অভিমুখে যাত্রা করিল।

14- কার্য্যমিত্যেব যৎ নিয়তং ক্রিয়তেঅর্জ্জুন।

সঙ্গং ত্যক্তা ফলঞ্চৈব স ত্যাগঃ সাত্ত্বিকো মতঃ || -গীতা, ১৮।৯